ইন্টারনেটের জন্ম খুব বেশীদিনের না হলেও এর প্রভাব কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রবল। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এর জনপ্রিয়তা এতই বেড়ে গেছে যে আজ ইন্টারনেট বিহীন জীবন কল্পনাই করা যায়না। আর যুব সমাজের বেলায় এটা বর্তমানে বিশেষ এক উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বলা যায় এক প্রকার ডিজিটাল আসক্তি। খুব বেশীদিন আগের কথা না, আমাদের ততা বিশেষ করে গরিব দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র সংবাদের মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র আর টেলিভিশন তাও হাতেগুনা একটা বা দুটা, আজকালকার মত এত টেলিভিশন চ্যানেলে ভরপুর ছিলনা। ইন্টারনেট আবিষ্কারের বদৌলতে আজ আমরা পূরা বিশ্বের খবর ঘরে বসেই পাই। তবে প্রতিটা বিপ্লবী আবিষ্কারের মধ্যে অনেক ভাল এবং খারাপ দিক আছে আর এর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়, এ যেন নিওটনের তৃতীয় সূত্র। যাক ইন্টারনেটের ইতিহাসের দিকে না গিয়ে এর কিছু মূখ্য ভূমিকা ও উদ্বেগের কথা তুলে দরার চেষ্টা করব।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমাদের নতুন প্রজম্ম যারা ইন্টারনেট, গেম, এবং কম্পিউটার নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকে তারা অন্যান্য সাধারন ছেলেমেয়েদের থেকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের দিকে অনেক এগিয়ে থাকে। তাদের জ্ঞানের বৃদ্ধি ঘটে দ্রুত। আবার এসবের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, যখন স্কুলে পরি আমাদের জানার এবং পড়ার একমাত্র উৎস ছিল বই আর শিক্ষক। কিন্তু আজ আপনি যে কোন বিষয় জানতে চান, Google, Bing, অথবা Yahoo সার্চ ইঞ্জিনের বদৌলতে হাজারো রকমের তথ্য পাবেন। এতে করে বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ন্যায্যতা যাচাই করা অনেকটা সহজ হয়ে ওঠে। কিন্তু এখান থেকে বিশুদ্ধ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আপনাকে বেছে নিতে হবে, যা অনেক সময় কটিন।তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবী আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় আজ আমারা ডায়ালআপ সংযোগ থেকে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছি। প্রযুক্তি বিপ্লবের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
আজকাল আমারা অনেক স্বাস্থ্য সচেতন এবং অনেক হিসাব নিকাশ করে খাদ্যসংযম অভ্যাস করি যাতে আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য টিক থাকে। এখন আধুনিকবিশ্বেরবড়উদ্বেগেরবিষয় হল ডিজিটাল ডায়েট, কারন আমরা যে পরিমান সময় কম্পিউটার, ইন্টারনেট বা সামাজিক মাধমের ওয়েবসাইট গুলোতে ব্যয় করি তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যমারাত্মক ক্ষতির কারন হতে পারে। পরিসংখ্যানেদেখা গেছে আমরা যদি শারীরিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি ডিজিটালডায়েট কেবিবেচনা না করি অদূর ভবিষ্যতে এটা আমাদের জন্য একবড় স্বাস্থ্য হুমকির কারন হতে পারে।
কম্পিউটার ব্যাবহারের ফলে আমরা যেন হাতের লেখা ভূলতে বসেছি এবং বর্তমান প্রজন্মেরজন্য সবচেয়েভয়ঙ্কর বিষয় হল, তারা যেন হাতের লেখা ভূলতে শিখেছে। আর বানানের কথা কি বলব, কম্পিউটারের শব্দস্বয়ংসংশোধনের বদৌলতে সচরাচর শব্দগুলোর বানান ও ভূল করে। হয়ত এমন একটা সময় আসবে জাতি আর হাতে লিখতে পারবনা সবকিছুই হবে ডিজিটাল। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের সভ্যতাই গতি দিয়েছে কিন্তু কেঁড়ে নিয়েছে আবেগ। যেখানে বিদ্যুৎ শক্তির অস্তিত্ব নেই সেখানেডিজিটাল শক্তি অস্তিত্ব থাকবে না, মূলতএটাঅকাজের বস্তু হবে।
আমি মনেকরি নতুন প্রজন্মের হাতে কোন কম্পিউটার, গেম বা অন্য কোন আধুনিক যন্ত্র তুলে দেওয়ার আগে এ সম্পর্কে অভিভাবকের সম্যক ধারনা তাকা জরুরি। অন্যতায় অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা। আপনার বাসায় যদি ইন্টারনেটের জন্য বেতার (wireless) মডেম ব্যবহার করেন, তাহলে ওটাকে কখনো অনিরাপদ রাখবেন না। এতে করে যেকোন কেউ আপানার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। ওয়ারলেস সংযোগ অনিরাপদ রাখা মানে আপনার ঘরের ডিজিটাল দরজা খোলা রাখা। এতে অনেক কিছু হতে পারে তাঁর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল আপনার গোপনীয় বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে। মডেমে নিরাপত্তাসংকলন করা খুবই সহজ, এই ক্ষেত্রে আপনার বন্ধুGoogleথেকে সাহায্যচাইতেপারেন। আপনি যদি আপনার সন্তানকে একটি কম্পিউটার বা স্মার্ট ডিভাইস কিনে দেন, ওটাতে সে অল্প কয়েক দিনে পারদর্শী হয়ে ওটবে যা হয়ত আমাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশী সময় লাগতে পারে। যখন তারা অনলাইনে গেম খেলে বা ইন্টারনেট ব্যাবহার করে, তখন খুব সহজে তাদের অজান্তে বিভিন্ন রকমের virus, spyware, malware, ransomeware কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে যেতে পারে। এ থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়ার উপায় হল, কম্পিউটার আপনার ছেলে বা মেয়েকে দেয়ার আগে, তাদের জন্য একটি সাধারন ব্যবহারকারি (General user) হিসাবে আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈয়ারি করুন। এর একটা বড় সুবিধা হল, এই অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে কম্পিউটারে কোন কিছু সহজে ইন্সটল করা যাবেনা। ইনস্টল করতে গেলে এডমিন পাসওয়ার্ড লাগবে। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাচ্ছাদের কোন সময় জ্ঞান থাকেনা, যখন গেম খেলতে বসে শুধু খেলতেই থাকে। এটানিয়ন্ত্রণ করার একটি সহজ এবং স্মার্টউপায় আছে আর তাহল কম্পিউটারে parental control বসানো। Parental control এর মাধ্যমে আপনি সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবেন কইটা থেকে কইটা সে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে। আপনার সেট করা সময় অনুসারে কম্পিউটারস্বয়ংক্রিয়ভাবেবন্ধহয়ে যাবে। আপনাকে আর এ নিয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা, বন্ধ কর বন্ধ করে বলে মাথা নষ্ট করতে হবেনা। আধুনিকADSLমোডেমবেশপরিশীলিত, আপনি মডেমে কার্যকলাপলগিংসক্রিয় করে দিতে পারেন এবং ইমেইল সেটআপ করতে পারেন। এমনকি আপনি ব্যভিচারি অথবা অনুপযুক্ত ওয়েবসাইট গুলোকে ব্লক করে দিতে পারেন। আপনার সময়সেটআপউপর নির্ভর করে এটা আপনাকে স্বয়ংক্রিয় ইমেল পাঠাবে। এতে করে আপনি দেখতে পারবেন কোন ওয়েবসাইট গুলো আপনার ছেলে-মেয়েরা ব্রাউজ করে। তারপরেও যদি আপনার উদ্বেগের কারন হয় তাহলে আপনি Safety Net Australia থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে পারেন।
আমরা যারা কম্পিউটার ব্যাবহার করি, তারা প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। এসব সমস্যার অনেকগুলো সমাধান করা যায় শুধু মাত্র কম্পিউটার পুনরারম্ভ বা পাওয়ার সাইকেল করে। ইন্টারনেট সমস্যার ক্ষেত্রেও তাই। যদি কোন কারনে মনে হয় আপনার কম্পিউটার ভালআচরণ করছেনা, তাহলে প্রথমে দেখতে হবে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত কিনা। কোনোঅপ্রত্যাশিতবিস্ময়এড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করার পরামর্শ দিই। এতেকিছু টাকাখরচ হবেকিন্তুএটার গুরুত্ব আছে। যে কোন কারনে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হলে, এটিমুছে ফেলা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ করবেননা।
সম্প্রতি একটা জিনিস কিনলাম এবং পরীক্ষা করলাম যা দিয়ে আপনার ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগ কে নেটওয়ার্ক সংযোগে পরিনত করা যায়। অর্থাৎ আপনাকে কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে আর সবুজ ক্যাবল নিয়ে টানাটানি করতে হবেনা। এটাকে বলাহয় powerline network, আপনি পাবেন ২০০Mbs স্পীড। বিশেষ করে যাদের দোতলা বাড়ি আছে এবং বেতার সংযোগে সমস্যা হয় তাদের জন্য খুবই উপকারি। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত আর ইন্টারনেট এবং টেলিফোনের জন্য আলাদা সংযোগ প্রয়োজন হবেনা সবকিছু বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে সম্ভব হবে।
প্রযুক্তির উপর বাংলায় লিখতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেলাম। সবার কাছে ক্ষমা ছেয়ে নিচ্ছি ভুল শব্দ প্রয়ন বা বাক্য বিন্যাসের জন্য।
Please note this article was written for the quarterly publication (magazine) of Australia Bangladesh Community Club (ABC Club), Western Australia which was published in July 2014.